গাজীপুরে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা : অধ্যক্ষ’র অপসারণের দাবিতে মহাসড়ক অবরো
খাইরুল ইসলামঃ
গাজীপুর মহানগরীর সালনায় অবস্থিত নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিনের পদত্যাগের দাবিতে পাশের ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় দুই ঘন্টা ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১০ টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত কয়েকশ’ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা এবং পায়ে হেঁটে গন্তবের দিকে রওনা হন।
সালনা নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শান্তা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিনের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো। তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। কোনো শিক্ষার্থীর বেতন এক মাস বাকি থাকলে ক্লাস থেকে বের করে দেন তিনি। কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে সমাধান করেন না। অভিভাবকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন ওই অধ্যক্ষ। এর বিরুেদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের ভেতরে বহিরাগত মাস্তান দিয়ে আমাদের কলেজ শাখার এক বড় বোন ও বড় ভাইকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে আমাদের স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা পাশের ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিগত কমিটির কাছ থেকে নানা অনৈতিক সুযোগ—সুবিধা নিয়েছেন এবং অবৈধভাবে কলেজের বেতন দ্বিগুণ—তিন গুণ বাড়িয়েছেন। এছাড়া ৭০ হাজার টাকার পুরোনো কাগজ বিক্রি করে তিনি ওই টাকা তছরূপ করেছেন।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাইড বই (লেকচার গাইড) সিলেকশন করে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন যা এখনও স্কুল ফান্ডে জমা হয় নাই। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অধ্যক্ষের বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এজন্য বাধ্য হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছি। তার বিষয়ে বা স্কুল কলেজের কোনো অভিযোগ করলেই তিনি রুমে ডেকে নিয়ে আমাদের অপমান করেন। একই দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ওই মহাসড়ক অবরোধ করেছিল।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সোয়া সকাল ১০টার দিকে ‘সালনা এলকার নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে গাজীপুর থানা হেফাজতে নেয়া হয়। পরে মহানগর, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সোয়া ১২টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুর সদর থানার ওসি মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, কলেজে অধ্যক্ষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকায় আন্দোলন চলাকালে তাকে সসম্মানে কলেজ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, তার প্রতিনিধি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিকাল পৌণে চারটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থানা চত্বরেও অবস্থান করছে। এর আগে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়েছেল।
ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সম্প্রতি নির্বাচনের মাধ্যমে কলেজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা বোর্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত পক্ষের লোকজন ওই কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে এবং তাদের মহাসড়কে নামিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে ওই কমিটির বিরুদ্ধে রীট হলে শিক্ষা বিভাগ একটি অ্যাডহক কমিটি গঠণ করে দেয়। এডহক কমিটিতে সভাপতি হলেন গাজীপুর সদরের ইউএনও সৈয়দ মোরাদ আলী।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোরাদ আলী সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে কমিটি সেগুলো খতিয়ে দেখবে। এর আগ পর্যন্ত অধ্যক্ষ কলেজে যাবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কমিটির এক সদস্য জানান, আন্দোলনের পেছনে কয়েক শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন। অধ্যক্ষকে সরিয়ে কলেজের জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষককে অধ্যক্ষের আসনে বসানোর পায়তারা করছেন তারা। এ কাজে শিক্ষার্থীদেরও উস্কে দিচ্ছেন তারা।
Leave a Reply