বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পেশাদার ভাল একজন সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রয়োজন সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের মানষিকতা। দেশের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রয়াত্ব অফিস, আদালত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড, আইন কানুন সম্পর্কে দক্ষ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেকেই বেকারত্ব গোছাতে কোন অভিজ্ঞতার তোয়াক্কা না করেই প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, আইপি, অনলাইন কার্ড সংগ্রহ করেই হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। এছাড়াও ভিডিও, ইউটিউব, ফেসবুক ফুটেজ,ষ্টেটাস, অনলাইন জার্নালিজম তরুণ প্রজন্মের আয় রোজগারের পথ খুলে দিয়েছ।
সাংবাদিকতায় সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করতে চাই নিয়ম নীতিমালা, অপসাংবাদিকতা, অপসংস্কৃতি রোধের সাংবাদিকের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন :
ক.সিদ্ধান্ত খ. সততা গ. ব্যক্তিত্ব ঘ. ব্যবহার ঙ. সাহসিকতা চ. বস্তুনিষ্ঠতা ছ. অধ্যবসায় জ.নিয়মানুবর্তিতা ও যোগাযোগ ঝ.দায়বদ্ধতা ঞ.বিচক্ষণতা
ভাষাগত দক্ষতাঃ বাংলা ও ইংরেজি, দুই ভাষাতে ভালো দখল থাকা প্রয়োজন।
অনুসন্ধানী মনোভাবঃ কোন কিছুর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহের মন মানসিকতা থাকা।
যোগাযোগের দক্ষতা- বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
উপস্থাপনার জ্ঞান- পাঠক বা দর্শক-শ্রোতার কাছে খবর উপস্থাপন করার ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।
লেখালেখির দক্ষতা- বিভিন্ন ধরনের লেখালেখিতে অভ্যস্ত থাকা জরুরি এ পেশায়।
বিশ্লেষণী ক্ষমতা- কিছু ক্ষেত্রে শুধু তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর না করে লেখায় বা সংবাদের যৌক্তিক চিন্তার প্রকাশ ঘটানো প্রয়োজন।
সংবাদ প্রতিবেদন তৈরীর প্রয়োজনেঃ
সংবাদ সংগ্রহ করা, সংবাদের সত্যতা যাচাই করা,
সংবাদ সম্পাদনা করা, প্রয়োজনে মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া, বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা,
কলাম লেখা ও বাছাই করা, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করা, প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করা ইত্যাদি।
দেশের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে এসেছেন। ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য সাংবাদিকতাই পড়তে হবে এমনটা জরুরি নয়। তবে বিষয়টি পড়া থাকলে একজনকে ভালো সাংবাদিক হতে তা অবশ্যই সাহায্য করে।
সাংবাদিকদের ‘সকল কাজের কাজী’ হতে হয়। অর্থাৎ অনেক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা একজন সাংবাদিকের জন্য জরুরি। সেটা রাষ্ট্রীয় ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল বা প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলা, কৃষি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, আইন-আদালত, সংবিধান, পরিবেশ জলবায়ু, খনিজ, জ্বালানি হতে পারে। পছন্দসই বিট নিয়েও অনেকেই কাজ করে থাকেন।
সাংবাদিকতায় যে সকল ক্ষেত্র রয়েছেঃ
প্রিন্ট মিডিয়া (পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী ইত্যাদি) : সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, প্রচার বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি, প্রিন্টিং/ছাপা বিভাগ।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (রেডিও, টেলিভিশন) : নিউজ বিভাগ-রিপোর্টিং, নিউজ এডিটর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর, ডেস্ক রিপোর্টার, নিউজ প্রডিউসার, নিউজ প্রেজেন্টার, অনলাইন এডিটর, প্রোগ্রাম প্রডিউসার, ভিডিও এডিটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এনিমেটর, সেট ডিজাইনার, চিত্রগ্রাহক, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্রডকাস্টিং এক্সিকিউটিভসহ নানা ধরনের কর্মসংস্থান। ইলেক্ট্রনক মিডিয়ায় সাধারণত নিয়ম হলো যেকোনো বিভাগে আপনি কাজ করতে প্রথমেই জানতে হবে বেসিক জার্নালিজম।
অনলাইন মিডিয়া : বাংলাদেশে প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র) ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে আরেকটি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো- অনলাইন মিডিয়া।
সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি। এছাড়াও এর চেয়ে কমবেশি বিভাগ থাকতে পারে। সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের উপর।
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন, অনেকেই পেশাদারিত্বের মান ক্ষুন্ন করে চলেছেন, এদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি নিয়ম নিতীমালা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই অনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। সাংবাদিকতায় অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় প্রবেশ করতে পারলে একটি সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ক্যরিয়ার গড়া সম্ভব।
হাজারো পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। পেশার সম্মান বাঁচাতে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আরো সচেতন মনযোগী হতে হবে।
শিবলী সাদিক খান
সাংবাদিক কলামিস্ট
Leave a Reply