শিবলী সাদিক খানঃ
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন, অনেকেই পেশাদারিত্বের মান ক্ষুন্ন করে চলেছেন, এদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি নিয়ম নিতীমালা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই অনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। সাংবাদিকতায় অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় প্রবেশ করতে পারলে একটি সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ক্যরিয়ার গড়া সম্ভব।
হাজারো পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। পেশার সম্মান বাঁচাতে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আরো সচেতন মনযোগী হতে হবে।
দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেকেই বেকারত্ব গোছাতে কোন অভিজ্ঞতার তোয়াক্কা না করেই প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, আইপি, অনলাইন কার্ড সংগ্রহ করেই হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। এছাড়াও ভিডিও, ইউটিউব, ফেসবুক ফুটেজ, ষ্টেটাস, অনলাইন জার্নালিজম তরুণ প্রজন্মের আয় রোজগারের পথ খুলে দিয়েছ।
সাংবাদিকতায় সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করতে চাই নিয়ম নীতিমালা, অপসাংবাদিকতা, অপসংস্কৃতি রোধের সাংবাদিকের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন : সিদ্ধান্ত, সততা, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহার সাহসিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা, অধ্যবসায় নিয়মানুবর্তিতা ও যোগাযোগ দায়বদ্ধতা বিচক্ষণতা।
ভাষাগত দক্ষতাঃ বাংলা ও ইংরেজি, দুই ভাষাতে ভালো দখল থাকা প্রয়োজন।
পেশাদার ভাল একজন সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রয়োজন সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের মানষিকতা।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার জন্য কী কী ক্যাটেগরি গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন, অদ্ভুতভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পড়ে সাংবাদিক হওয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশ কম। ধীরে ধীরে এই আগ্রহ আরও কমছে।
এক দশক আগেও যারা সাংবাদিকতায় আসতেন, রিপোর্টিং, ফিচার কিংবা অনুসন্ধানে দারুণ হাত পাকিয়ে আসতেন। এখন পরিবেশ ভিন্ন, এ দুনিয়াতে আসলেই টের পাবেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে যে সব ক্যাটেগরি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন:
বেসিক রিপোর্টিং সেন্স, সংবাদ লেখা, সংবাদ সংগ্রহ, সংবাদ সম্পাদনার মত বেসিক ও মৌলিক বিষয়গুলো জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে। টিভি সাংবাদিক কিংবা পত্রিকা-দুই জায়গাতেই প্রয়োজন। প্রযুক্তি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, টুকটাক সোশাল মিডিয়ার জ্ঞান, অনলাইনে ফেক নিউজ চেনার বিভিন্ন উপায় জানা জরুরী। এছাড়াও টুকটাক ক্যামেরা, ভিডিও এডিটিং, ছবি সম্পাদনা শেখা ও জানা প্রয়োজন।
মানবিক দক্ষতা: সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সংবাদ সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশল, ঘটনা-সত্য-মিথ্যা বোঝা ও জানা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে কোন যোগ্যতা লাগে, সাংবাদিক হওয়ার কোন সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা নির্ধারণ করা নাই। তবে এখন মিডিয়া হাউসগুলো সাংবাদিকতায় স্নাতক পাসদের অগ্রাধিকার দেয়।
আমি বাংলাদেশে সাংবাদিক হতে চাই। কিভাবে হতে পারি। বিভিন্ন ধরনের পাঠকের জন্য সাংবাদিকতার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। একটি একক প্রকাশনায় (যেমন সংবাদপত্র) বিভিন্ন ধরনের সাংবাদিকতা উপাদান থাকে এবং প্রত্যেক উপাদান বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বা ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন পাঠকের জন্য সংবাদ সরবরাহ করে থাকে।
সাংবাদিকতার কয়েকটি ক্যাটেগরি উল্লেখযোগ্য ধরন হল ওকালতি সাংবাদিকতা– কোন নির্দিষ্ট মতাদর্শ বা পাঠকের মতামতের প্রভাব সমর্থন করে লেখা হয়।
সম্প্রচার সাংবাদিকতা– বেতার বা টেলিভিশনের জন্য লিখিত সাংবাদিকতা।
নাগরিক সাংবাদিকতা– নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক সাংবাদিকতা।
উপাত্ত সাংবাদিকতা– ঘটনাবলী সংখ্যায় খুঁজে বের করার এবং তা সংখ্যায় প্রকাশ করার রীতি।
ড্রোন সাংবাদিকতা– ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করা।
গঞ্জো সাংবাদিকতা– হান্টার এস থম্পসন কর্তৃক উদ্ভাবিত গঞ্জো সাংবাদিকতা হল প্রতিবেদন প্রণয়নের নিজস্ব উপায়।
পারস্পারিক ক্রিয়াশীল সাংবাদিকতা – অনলাইন সাংবাদিকতার একটি ধরন যা ওয়েবে উপস্থাপন করা হয়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা – সামাজিক সমস্যাসমূহ উদঘাটন করে এমন প্রতিবেদন।
বিশ্লেষণী ক্ষমতা- কিছু ক্ষেত্রে শুধু তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর না করে লেখায় বা সংবাদের যৌক্তিক চিন্তার প্রকাশ ঘটানো প্রয়োজন।
আলোকচিত্র সাংবাদিকতা – চিত্রের সাহায্যে সত্য ঘটনাসমূহ উপস্থাপনের রীতি।
সেন্সর সাংবাদিকতা – অনুসন্ধানের লক্ষ্যে সেন্সর ব্যবহার করা।
টেবলয়েড সাংবাদিকতা –বিনোদনমূলক সংবাদ প্রণয়ন, যা মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে কম বৈধ।হলুদ সাংবাদিকতা– অতিরঞ্জিত অভিযোগ বা গুজব বিষয়ক প্রতিবেদন।
ক্রীড়া সাংবাদিকতা- ক্রীড়া সাংবাদিকতা অপেশাদার এবং পেশাদার ক্রীড়া খবর এবং ঘটনা রিপোর্ট উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ক্রীড়া সাংবাদিক সকল প্রিন্ট, টেলিভিশন সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সহ মিডিয়াতে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমের বিকাশের ফলে সাংবাদিকতাকে একটি প্রক্রিয়া না বলে নির্দিষ্ট সংবাদ পণ্য বলে অভিহিত করার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই বিবেচনায়, সাংবাদিকতা হল এক ধরনের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া যেখানে একাধিক লেখক ও সাংবাদিক এবং সামাজিকভাবে মধ্যস্থতাকারী জনগণ জড়িত থাকে। এই বিষয়ে একটু গাটাঘাঁটি করলে বুঝতে পেরে যাবেন । কোথায়, কি ভাবে, কি করে, কি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষা ছাড়াও যেকোন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে এবং পাশাপাশি দেশ-বিদেশের সকল বিষয়ে জ্ঞান ও লেখালেখির অভিজ্ঞতা/সক্ষমতা থাকলেই এই পেশায় যুক্ত হওয়া সম্ভব। মূল কথা আপনার কলমের শক্তি থাকলেই সাংবাদিক হতে পারবেন।একজন সাংবাদিক বিভিন্ন বিষয়ে যতবেশি ধারনা রাখেন, তিনি তত বেশি শক্তিশালী পেশাদার সাংবাদিক হতে পারবেন।
Leave a Reply